নিউজবাংলা, দিঘা : উদ্বোধনের এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই মন্দিরে পা রাখলেন এক কোটিতম দর্শনার্থী। রবিবার (Digha) বিকেলের পড়ন্ত রোদে মন্দিরের নীলচক্র যখন সমুদ্রের হাওয়ায় দুলছে, তখনই তৈরি হলো এই ঐতিহাসিক মুহূর্ত। ২০২৫ সালের ৩০ এপ্রিল মু…
নিউজবাংলা, দিঘা : উদ্বোধনের এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই মন্দিরে পা রাখলেন এক কোটিতম দর্শনার্থী। রবিবার (Digha) বিকেলের পড়ন্ত রোদে মন্দিরের নীলচক্র যখন সমুদ্রের হাওয়ায় দুলছে, তখনই তৈরি হলো এই ঐতিহাসিক মুহূর্ত।
২০২৫ সালের ৩০ এপ্রিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে যে মন্দিরের যাত্রা শুরু হয়েছিল, মাত্র আট মাসেই তার এই বিপুল জনপ্রিয়তা দিঘাকে বিশ্বমানের তীর্থক্ষেত্র হিসেবে কার্যত সিলমোহর দিল।
রবিবার বিকেলে এক কোটিতম দর্শনার্থী হিসেবে চিহ্নিত করা হয় কলকাতার টালিগঞ্জের খুদে পুণ্যার্থী কাকলি জানাকে। বাবা সুরজিৎ জানার সঙ্গে জগন্নাথ দর্শনে এসেছিল সে।
এই মাহেন্দ্রক্ষণকে স্মরণীয় করে রাখতে মন্দির কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে ওই পরিবারকে রাজকীয় সংবর্ধনা দেওয়া হয়। খুদে কাকলির হাতে তুলে দেওয়া হয় জগন্নাথের মহাপ্রসাদ, মালা ও বিশেষ স্মারক। অভিভূত সুরজিৎবাবু বলেন, “স্রেফ ঠাকুর দর্শনে এসেছিলাম। কিন্তু প্রভুর কৃপায় যে এমন বিরল সম্মানের সাক্ষী হব, তা কল্পনাও করতে পারিনি।”
বিগত কয়েক মাসে সৈকত শহর দিঘার ভোল আগাগোড়া বদলে গিয়েছে। একসময় যা ছিল মূলত ঋতুভিত্তিক পর্যটন কেন্দ্র, আজ তা সারাবছরের ভক্তি ও সংস্কৃতির এক মহামিলনস্থল। মন্দিরের প্রধান পুরোহিত তথা ট্রাস্টি রাধারমণ দাস এই সাফল্য প্রসঙ্গে বলেন, “এই ভিড় কেবল সংখ্যাতত্ত্ব নয়, এটি জগন্নাথদেবের সর্বজনীন আলিঙ্গনের পবিত্র স্বীকৃতি। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এই মন্দির আজ এক আধ্যাত্মিক কেন্দ্রবিন্দু।”
মুখ্যমন্ত্রীর দূরদর্শী চিন্তার প্রশংসা করে তিনি আরও জানান, এই উদ্যোগ বাংলার আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যকে যেমন উচ্চতা দিয়েছে, তেমনই সাধারণ মানুষের অন্নসংস্থানের নতুন দিশা দেখিয়েছে।
পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক ইউনিস ঋষিন ইসমাইল জানান, “উদ্বোধনের দিন থেকেই দিঘার জগন্নাথধামকে কেন্দ্র করে মানুষের উন্মাদনা নজরকাড়া। জেলা প্রশাসন সর্বদা মন্দির ও সংলগ্ন এলাকার পরিকাঠামোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে।” তিনি আরও জানান, গত ১৬ ডিসেম্বর পিডব্লিউডি, বিদ্যুৎ দফতর, পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় বৈঠক করা হয়েছিল ভিড় সামলানোর জন্য। সকলের ঐকান্তিক সহযোগিতাতেই আজ এই এক কোটির মাইলফলক ছোঁয়া সম্ভব হয়েছে।"
দিঘার এই জগন্নাথ ধাম এখন আর রাজ্যের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নেই। ইসকন-সহ বিশ্বের প্রায় ১৫০টি দেশের ভক্তরা এখন দিঘামুখী। আমেরিকা থেকে অস্ট্রেলিয়া— বিশ্বের নানা প্রান্তের পুণ্যার্থীদের উপস্থিতিতে বঙ্গোপসাগরের উপকূলে এখন আক্ষরিক অর্থেই এক আন্তর্জাতিক বৈষ্ণব সংস্কৃতির মেলবন্ধন। আধুনিক পরিকাঠামো আর সাগরের স্নিগ্ধতা মিলে মন্দিরটি যেন এক শান্তির মরুদ্যান।
সৈকত শহরের এই রূপান্তরে খুশি স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও। হোটেল, পরিবহন থেকে শুরু করে হস্তশিল্প— সর্বত্রই এখন লক্ষ্মীর ছোঁয়া। সব মিলিয়ে, দিঘার বালুকাতটে মাথা তুলে দাঁড়ানো এই মন্দির আজ বাংলার কৃষ্টি ও আধ্যাত্মিক পুনরুত্থানের এক অজেয় স্তম্ভ হয়ে উঠল।
দেখুন এক্সক্লুসিভ ভিডিও প্রতিবেদন :

No comments