দীপক প্রধান, হলদিয়া (পূর্ব মেদিনীপুর) : শুধু পশ্চিম মেদিনীপুর নয়, অবৈধ বালি কারবারিদের রমরমা চলছে পূর্ব মেদিনীপুরেও। প্রশাসনের নাকের ডগায় হলদি নদীর পাড়ে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে রীতিমতো রমরমিয়ে চলছে এই কারবার। দু-একটি বৈধ খাদান মালিক বিপুল টাকার বিনিময়ে প্রশাসন থেকে লিজ নিয়ে রীতিমতো ধুঁকছে, অথচ সেখানেই ক্রমাগত ফুলে ফেঁপে উঠছে চোরা বালির কারবারীরা।
বালি মাফিয়াদের এই দাপাদাপিতে অতিষ্ঠ হলদি নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা। প্রতিনিয়ত বালি বোঝাই ডাম্পার, মেশিনভ্যানের চলাচলে বেহাল হয়ে যাচ্ছে রাস্তা। অন্যদিকে প্রশাসনেরও লোকসান হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। অথচ কোনও এক জাদুবলে সবার নাগের ডগাতেই এই চোরাই কারবার চলছে রমরমিয়ে।
এই বিষয়ে একাধিক অভিযোগ পেয়ে ঘটনা খতিয়ে দেখতে বালুঘাটা এলাকায় হাজির হয় নিউজবাংলার প্রতিনিধি। বালুঘাটা থেকে নরঘাট পর্যন্ত ভবানীপুর, মহিষাদল ও নন্দকুমার থানা এলাকায় এমন বহু বালি খাদানের হদিশ মিলেছে আমাদের প্রতিনিধির ক্যামেরায়। কিন্তু বৈধ কাগজ দেখতে চাইলেই ডোন্ট কেয়ার বালি মাফিয়ারা। অনেকেরই আবার প্রশ্ন, সবাই যখন এভাবেই চালাচ্ছে তখন আমরা করলে দোষ কোথায়?
দেখুন নিউজবাংলার বিশেষ ভিডিও প্রতিবেদন :
কেশবপুর জালপাই এলাকার এক বৈধ বালি খাদানের মালিক মোক্তার আলী'র দাবী, "বৈধ বালি খাদান কিনে মহা ফাঁপরে পড়েছি আমরা। বালুঘাটা থেকে নরঘাট পর্যন্ত প্রায় ১২টি অবৈধ খাদান থেকে অনেক কম টাকায় বালি পাচার হয়ে যাচ্ছে। অথচ সরকারকে বিপুল টাকা দেওয়ার পর কম্পিটিশানে পিছিয়ে যাচ্ছি আমরা। বহু টাকার দেনা মাথায় চেপেছে। বারেবারে প্রশাসনে বলেও কোনও লাভ হচ্ছে না" বলেই দাবী তাঁর।
পূর্ব মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলা শাসক এবং জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারীক সুদীপ্ত পোড়েলের দাবী, "এই এলাকাগুলিতে ৯টি'র মতো বৈধ বালি খাদান রয়েছে। তার বাইরেও একাধিক ব্যক্তি চোরাই পথে বালি তোলার চেষ্টা করলেই আমরা তাদের পাকড়াও করে জরিমানা করি। এরপরও নদীর বিভিন্ন জায়গায় অবৈধ খাদান গজিয়ে উঠছে। অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। মঙ্গলবারও বিভিন্ন বিএলআরও, আধিকারীকদের সঙ্গে বৈঠকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য"।
তবে বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি নবারুন নায়েকের দাবী, "আমরা এই সমস্ত কারচুপি বন্ধ করার দাবীতেই পুলিশ সুপারের অফিসে ডেপুটেশান দিয়েছি। উনি না থাকায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে বিষয়গুলি জানিয়েছি। প্রশাসন বিষয়টি দেখার আশ্বাস দিলেও কার্যত কিছুই হচ্ছে না। তমলুকের নারায়ণপুর এলাকাতেও একই ভাবে এই চোরাই বালি তোলা হচ্ছে। পুলিশ সব দেখেও চুপ কেন? এরপর মানুষ জাগ্রত হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুললে তবেই হয়তো পুলিশের টনক নড়বে" বলেই মন্তব্য করেন তিনি।
No comments